ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নরেন্দ্র মোদির সাথে তাঁর শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ‘সব ইস্যু’ উত্থাপন করেছেন উল্লেখ করে বলেন, আলোচনার ফলাফলে ঢাকা খুশি।
আজ রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আলোচনার ফলাফলের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপনের লক্ষ্যে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সাথে আমাদের সব ইস্যু তুলে ধরেছি। শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল খুব ভাল হয়েছে (এবং) আমরা খুশি।’
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ১ ঘণ্টা ১৫মিনিটের শীর্ষ বৈঠকের সিংহভাগ সময় নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন, পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য সহযোগিতা ইস্যু ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
মোমেন বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভারতীয় পক্ষ এ বিষয়ে সম-মনোভাব প্রদর্শন করে।’
ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী পরে শীর্ষ বৈঠক নিয়ে নয়াদিল্লির পক্ষে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাতটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সমঝোতার কাঠামো (এফওইউ) স্বাক্ষর হয়।
মোমেন বলেন, প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তি এবং মনু, মুহুরী, খোওয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধকুমার নামে আরও ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে চুক্তিতে উপনীত হতে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত থাকা যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ডাকতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মোমেন বলেন, ‘ভারত অনেক আগেই তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি।’ তিনি একই সাথে উল্লেখ করেন যে, নয়াদিল্লি এ নিয়ে দেশীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করছে।
আলোচনার পর ইস্যু করা যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বণ্টনে ২০১১ সালে উভয় সরকারের সম্মত হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে স্বাক্ষরের ওপর জোর দেন। মোদি নয়াাদিল্লির আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং সেই লক্ষ্যে অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাওয়া যাওয়ার সাথে সাথেই বাংলাদেশে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সরবরাহের আশ্বাস দেন।
মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমরা (ভারত থেকে) বন্ধুসুলভ মূল্যে ভ্যাকসিনটি পাব। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, নয়াদিল্লি বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাাদনে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছে।
বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ সত্ত্বেও সীমান্ত হত্যার বিষয়টি ‘কলঙ্ক’ হিসাবে থেকে গেছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, মোদি বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করতে বলবেন।
পরে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার অবশ্য তার ব্রিফিংয়ে বলেন যে ভারতীয় পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে তারা বিএসএফকে কেবল ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার সর্বশেষ উপায় হিসাবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেবে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় নেতা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে সীমান্তে নাগরিকের প্রাণহানির বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় এবং সীমান্ত বাহিনীকে এ জাতীয় হত্যাকা- শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাকে শূন্যে নামাতে চলমান সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) নির্বাচিত হওয়ায় ভারতকে অভিনন্দন জানান এবং একই সাথে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নয়াদিল্লির সহায়তা কামনা করেন।
মোমেন বলেন, ‘ভারতীয় পক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা বিশ্বাস করেন সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হলো বাস্তুচ্যুত মানুষদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং তারা এ বিষয়ে যা কিছু করার দরকার তা করবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সুগম করতে বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ভারতের অশুল্ক বাধা অপসারণ চান ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাদের রফতানি-আমদানি নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনলে তা আগে-ভাগেই ঢাকে অবহিত করার আহ্বান জানান। কেননা ভারতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে প্রভাবিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
মোমেন বলেন, ‘ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশকে তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
Go to Source
December 18, 2020
12:00 AM